এমন অনেক সময় দেখা যায় আমরা গুনাহ করতে না চাইলেও গুনাহ্ হয়ে যায়। কি অবাক হচ্ছেন??? চলুন একটু মিলিয়ে দেখি -----
আপনি গায়রে মাহরাম মেইনটেইন করে চলেন। এর জন্যে রীতিমত অনেক যুদ্ধ করেন। কিন্তু সর্বশেষে আপনার টাইমলাইনের কোনো দ্বীনী বোন ঠিক তার স্বামী কিংবা ভাইয়ের সাথে ফ্যামিলি টাইমিং এর ছবি তার ডে বা টাইমলাইনে দিয়ে দিল। না চাইতেও আপনার চোখ সেখানে পড়ে গিয়ে শয়তান এর ওয়াসওয়াসা তে পড়ে ছবি গুলো জুম করে দেখতে লাগলেন। কিংবা একবার দুইবার এড়িয়ে গেলেও তিনবারের মাথায় আর পারলেন না।
আপনি মিউজিক শুনেন না, গান এড়িয়ে চলেন। কিন্তু কিছু বোনদের টাইমলাইনে বিরহ দুঃখের ভিডিও শেয়ার করা মিউজিক, গান সহ বা এলাকার কোনো অনুষ্ঠানে কিংবা রাস্তার পাশে, পাশের বাড়িতে জোরে সাউন্ড বক্স। যেগুলো আগে আপনি শুনেছিলেন আরো বহুবার। হালকা একটু টোন শুনতেই গানের সম্পূর্ন লিরিক্স মনে পড়ে গেল আপনার। মনের অজান্তেই পরের লাইন স্মরণে আস্তে শুরু করলো। অথচ এই মিউজিক এর অভ্যাস ছাড়ার জন্যে কতই না তিতিক্ষা বরদাস্ত করেছেন আপনি।
গীবত করা মোটেও পছন্দ করেন না আপনি। অথচ কিছু গ্রুপ, পেইজে রোজ চর্চা হয় ভাইরাল বিষয়গুলো নিয়ে। নফসের তাড়নায় আপনি গীবত না করলেও সেগুলো মনোযোগের সাথে পর্যবেক্ষণ করে মজা নিতে থাকেন। কোনো এক পর্যায়ে তাল মিলাতে গিয়ে আপনিও গীবত মুলক বাক্য বলে ফেলেন, যা আপনার নিজেরই নিয়ন্ত্রন থাকে না।
আপনি প্রচণ্ড পরিমাণে দুনিয়া বিমুখ হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছু আধুনিক বোনের বিলাসময় টাইমলাইন কখন আপনার মনে দুনিয়াবি ঢুকিয়ে দিচ্ছে আপনি টেরই পাচ্ছেন না। আপনি ছিলেন শুকরিয়া জ্ঞাপনকারী এক অধম বান্দা কিন্তু অন্যদের সুখের পোষ্ট দেখে নিজেকে অসুখী ভাবতে শুরু করলেন নিজের অজান্তেই। তাদের বিলাসী কর্মকাণ্ড আপনাকে ধোকায় ফেলে দিচ্ছে বার বার।
আপনি অপচয় রোধ করে চলার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফেসবুক পেইজের বিভিন্ন স্টাইলিশ বোরকা দেখে আপনার চোখ আটকে হয়। না চাইতে সেগুলো অর্ডার করার বাসনা মনের মধ্যে আসতে থাকে। কারণ সেগুলো খুবই পপুলার। সবাই প্রশংসা করছে। এমন একটা বোরকা অর্ডার করা আপনার জন্যে সহজ বিষয়। অথচ এটা এত ফ্যাশনেবল যে এটা দিয়ে পর্দা কখনো সম্ভব না। কিন্তু দুনিয়ার মোহে পড়ে আপনি পর্দার সংজ্ঞাটাও ইনস্ট্যান্ট বদলে ফেললেন। আপনার নফস ধোঁকায় পড়ে গেল।
আপনি অনর্থক কথা হাসি ঠাট্টা পছন্দ করেন না। সব সময় প্রোডাক্টিভ কথা বলতে পছন্দ করেন। অথচ ফেসবুক কিছু গ্রুপে এড হয়ে আপনি সময় নস্ট হওয়ার রসাতলে ডুবে গেলেন। সবার অনর্থক ফানি কথাবার্তা দেখে নিজেকে আটকে রাখতে পারলেন না। কিংবা ফানি পোস্ট দেখে কমেন্ট করা থেকে নিজের নফসকে বিরত রাখতে পারলেন না। অথচ আপনি জানেন এগুলো অনর্থক কাজ, এগুলো আপনার নফসের জন্যে মোটেও উপকারী না।
আপনি কু ধারণা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। অথচ কয়েকটা দ্বীনী বোনের সেইম পোষ্ট দেখে কিছু মানুষকে নিয়ে আপনি কটূক্তি করতে শুরু করলেন অথচ সত্য মিথ্যে আপনিও ভালো করে জানেন না। কিংবা কারো পিরিয়ড চলছে সালাত নেই, আপনি ভাবছেন সে সময়মত সলাত না পড়ে অনলাইনে পড়ে আছে। বা অন্য কারো কমেন্ট শুনে ভাবছেন সে হয়তো খুব বদমেজাজি। এভাবে নানান ধরনের অনুমান ও কুধারণা করতে গিয়ে নিজের আখলাক নষ্ট করছেন বরংবার।
আপনি কখনো বিবাদ বা তর্কে জড়ানো পছন্দ করেন না। অথচ কোনো প্রসঙ্গে দেখছেন বোনদের কথা চলছে। আপনিও হুট করে তর্কে জড়িয়ে গেলেন। আপনিও মনে করতে লাগলেন আমি সঠিক, সে ভুল। অন্য বোনদের সাথে তাল মিলিয়ে আপনিও জবাব দিতে শুরু করলেন। এক পর্যায়ে আঘাত দিয়ে কথা বলা শুরু করে দিলেন নিজে তর্কে জিতার জন্যে। অথচ বিষয়টি আপনার কাছে স্বাভাবিকই মনে হতে লাগলো।
আপনি সময়ে বারাকাহ আসার জন্যে অনেক মেহনত করছেন। কিন্তু 5 মিনিটের প্রয়োজনে এসে 50 মিনিট কাটিয়ে দিলেন অনলাইনে। অনর্থক সময় নষ্ট করে নিজেকেই ক্ষতির সম্মুখীন করে দিলেন। গুনাহ মূলক কথাতে জড়িয়ে গেলেন নিজের অজান্তে।
–এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে যেভাবে গুনাহ্ না করতে চাইলেও নানান ভাবে আমরা গুনাহ্ তে জড়িয়ে পড়ি। যেই গুনাহের বিষয়ে আমরা অবগত না। গুনাহ থেকে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করতে চেয়েও যেন বার বার গুনাহের সাগরেই ডুব দিচ্ছি। আবার পাড়ে ফিরে আসার জন্যে সাঁতার কাটছি ভীষণভাবে। এভাবে কাটছে প্রহর।
অথচ মৃত্যুর সময় তো ঘনিয়ে এলো। এটাই সেই সঠিক সময় নয় কি!! নিজেকে প্রোডাক্টিভ মুসলীম হিসেবে গড়ে তোলার। নিজেকে কল্যাণকর মুসলিম উম্মাহ হিসেবে গড়ে তোলার। যাতে করে আমি অন্যের গুনাহ্ নয় সওয়াবের, নেকির জারিয়া হবো। পরস্পরকে জান্নাত পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় মেহনত করে যাবো। একে অপরের জন্যে কল্যাণকর উত্তম জান্নাতের সাথী হওয়ার প্রত্যয়ে কাধে কাধ মিলিয়ে, হাত হাত রেখে রবের আরাধনা করে যাবো। আচ্ছা, এ কি সম্ভব না!!
–Shermin Akter Jhuma
Main source: Please click here
0 Comments