ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে ...।। জীবন সংসার

 

আমার ক্যাম্পাসের ছোট ভাই.
দেখে মনে হলো ছেলেটা খুব ডিসেন্ট,কথা বলায় খুব পলাইট.
যেদিন ভর্তি হতে এসেছিল ওই রাত টা আমার বাসাতেই ছিল.
সন্ধ্যায় নাস্তা করে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরলাম ও রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে ক্যাম্পাসে নতুন তাই টুকটাক ভয়ও পাচ্ছিলো.
ও বলতেছিল Air Force এর প্রতি তার বেশ ভালো নেশা .
তো সেদিন এই ছেলে এক কান্ড করলো খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই উধাও আমরা ওকে খুঁজতে খুঁজতে শেষ পরে শুনি ও রাজশাহী চলে গেছে. খুব রাগ হয়েছিলো তখন এট লিস্ট বলে তো যাবি.

যাক এই গেলো পরবর্তীতে ক্যাম্পাস নিয়মিত আসা যাওয়া শুরু করলো বিভিন্ন ক্লাব হ্যান ত্যান মিলিয়ে বেশ ভালো সম্পর্কই হয়েছে.ক্যাম্পাসে শুরুর দিকে খুব ঝোঁক থাকে ক্লাবের প্রতি.আমি টুকটাক ফটোগ্রাফি করতাম ও আমাকে নক দিতো ছবি দেখাতো ফটোগ্রাফার হয়ে যাবে খুব কিন্তু ক'দিন বাদে তার ফটোগ্রাফি শেষ আর খবর নেই.

এমনিতে বেশ ভালোই কাজের ছেলেটা, আবার দুষ্টও আছে তবে এই বয়স টায় ওমন হওয়া টায় খুব অস্বাভাবিক কিছু না.
যাক বেশি দিন ক্যাম্পাসে থাকা হয়নি সেই যে লক ডাউন লাগলো আর দেখা হওয়ার সুযোগ হয়নি.
ফেইসবুকেই টুকটাক কথা হতো.ও নক দিতো ভালো খারাপ জিজ্ঞেস করতো.

আচ্ছা, আমার না মৃত্যুর সজ্ঞা জানা নেই তবে আমি জানি যে মৃত্যু অবধারিত এবং তা আসবেই এই উপলব্ধি খুব ভালো ভাবেই করতে পারি আর আমি তো পরকালেও বিশ্বাস করি তাহলে কেন আমি দুনিয়ার এই মায়ার পিছন ছুটছি বেশ চিন্তায় ডুবে যাই.

জন্ম থেকে শুরু করে আমাদের প্রত্যেকের শরীরের একটা রোগ সুপ্ত থাকেই। প্রত্যেকটা মানুষই ওই রোগটা পেলেপুষে বড় করে. কেউবা ছোট বয়সেই ধরাশায়ী হয়ে যায়.
ধরুন কেউ একজন হঠাৎ মারা গেলো আপনি শোক পালন করলেন আহারে কত সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ দেখলাম সেদিনও তো কত খুনসুটি হলো দু'জনের.
ওই যে বললাম প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যেই একটা রোগ সুপ্ত থাকে কিন্তু আমরা তা দুনিয়ার অপার মায়ায় তামাশায় সেই রোগ টা কে চিনতে পারি বা ধরতে পারি না ধরতে পারলেও তেমন একটা গুরুত্ব দেই না কিন্তু তা আমরা পেলেপুষে বড় করি.আমরা সেই রোগ গুলোকে বিভিন্ন নাম দেই.

সেই সুপ্ত থাকা রোগের প্রকাশিত হওয়ার সময় সবার জন্য এক না কারো অল্প ক'দিনেই প্রকাশ পেয়ে যায়, কেউ কয়েক ক্লাস পড়ার সুযোগ পায়, কেউ চাকরি পর্যন্ত যায়, কেউ বিয়ে, কেউবা সন্তান সন্ততি পর্যন্ত সুযোগ পায়.
মৃত্যু নিয়ে আমরা আবেগ শোকে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকি. কারো মৃত্যুতে আবেগ শোক দেখানো টা আমার কাছে নেহায়েত ন্যাকামি ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না.

আমি জানি যে আমারও মৃত্যু হবে তবে সিরিয়াল টা ভিন্ন আমি নিজেকে শুধরানোর চেষ্টা না করে নিজেকে নিয়ে চিন্তা না করে আহারে কত অকালেই ঝরে গেলো ছেলেটা, আহারে মিস করবো তাকে, কত কাজেরই না ছিলো ছেলেটা, আহা কত কত স্মৃতি. কিন্তু তারপরই তো আবার নিষিদ্ধ কাজের মধ্যে ডুবে থাকি আর ওই আবেগ তো ন্যাকামোই তাই না.নিজেকে জাহান্নামে রেখে আরেকজনের জান্নাত কামনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি.

আল্লাহর ও আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নেতা প্রিয়, প্রেমিকা প্রিয়,কোরআনের চেয়ে কাছে গান বাজনা প্রিয়,সালাতের চেয়ে প্রজেক্ট, মিটিং, ক্লাব হ্যান ত্যান প্রিয় আরেক জনের মৃত্যুকালীন শোকের আবেগ শোনানো তো একজন নির্বোধের কাজই মনে হয় .

মৃত্যুর কোনো কাল অকাল নেই ওই যে বললাম প্রত্যেকটা মানুষ একটা রোগ লালন করে কিন্তু প্রকাশ পাওয়ার সময় ভিন্ন.
আর ওই সময়টাই হচ্ছে আপনার নিজেকে শোধরানোর সুযোগ, নিজেকে নিয়ে ভাবার জন্য সুযোগ মহান রবের সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ এ ব্যতিত আর কিছুই নয়.মৃত্যু হলো আল্লাহর ফয়সালা আর আল্লাহর ফয়সালাই সবচেয়ে উত্তম.

আপনি আপনার রব কে ছেড়ে কিসের মায়ায় ছুটছেন, হ্যাঁ?? যারা আপনাকে নিয়ে মিথ্যে আবেগ দেখাবে তাদের জন্য এতো মায়া? রব্ব কে ভুলে থাকা??যে আপনাকে সালাতে স্মরণ না করে সভা, আড্ডায় মিথ্যেবুলি ছড়িয়ে স্মরণ করবে আপনি তাকে অনুসরণ করছেন??

দুঃখের বিষয় হলো আমারা রব্ব কে চিনতে পারি না সুস্থ আছি বলে দুনিয়ার ব্যস্ততায় ডুবে থাকি. দুনিয়াকে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগি.

কিছু মানুষের মৃত্যু হয় কিন্তু তার স্মৃতি গুলো নোংরামি তে জর্জরিত থাকে.তাকে মানুষ হারাম কাজে স্মরণ করে.তার টাইমলাইন অশালীন জিনিস দিয়ে ভরপুর থাকে.

নিজেকে নিয়ে ভাবুন প্লিজ.

ক্যাম্পাসের যে ছেলেটির কথা বলছিলাম সেও হিদায়েতের সুযোগ পেয়েছিলো আল্লাহ তায়া’লা তাকে সে সুযোগ দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ. নিজেকে শোধরানোর চেষ্টায় উঠে পড়ে লেগে গিয়েছিল. হয়তো জীবনের এই পর্যায়ে এসে তার মাঝে সুপ্ত থাকা রোগটি প্রকাশিত হচ্ছে তা সে টের পাচ্ছিলো বেশ ভালো ভাবে.দ্বীন বুঝতে পেরেছে দুনিয়ার মিথ্যে মায়া থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেছে.আল্লাহ তায়া’লা চেয়েছেন বলেই হয়েছে.যদিও খুব কম সময়ই পেয়েছিল.

আল্লাহ তায়া’লা বলেন
["তিনি যাকে চান, তাঁর রহমত দ্বারা একান্ত করে নেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহের অধিকারী।"(সুরা
আলে -ইমরান,৭৪)]

ছেলেটা কিছুদিন আগে নক দিয়ে বলছিল ভাই ক্যাম্পাসে গেলে গল্প শুনবো. হ্যাঁ রে ভাই এই গুনাহগার কে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা দয়া করলে ইং শা আল্লাহ আমরা জান্নাতে বেশ জমিয়ে গল্প করবো. এই ফেতনার সময়ে টিকে থাকার গল্প শুনাবো.

ও হ্যাঁ যার কথা বলছিলাম ওই ছেলেটার মধ্যে সুপ্ত থাকা রোগটি প্রবল ভাবে প্রকাশিত হয়েছে সে গতকাল আল্লাহর মেহমান হয়ে চলে গিয়েছে.

اِنَّا لِلّٰہِ وَ اِنَّاۤ اِلَیۡہِ رٰجِعُوۡنَ ﴿۱۵۶﴾ؕ
"নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।"


Main source: Please click/tap here. 

Reactions

Post a Comment

0 Comments

Close Menu