আমরা সবাই জানি তিব্বত চীনের অংশ । কিন্তু সিরিয়ান গোলান মালভুমির সাথে এর তুলনা করে আমরা কি কখনো চিন্তা করেছি ?
আজ সেরকমই একটি বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে নিয়ে এসেছি আমরা ।তিব্বতের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব : চীন কেন তিব্বত দখল করল ? ===============
.
তিব্বত মালভূমিকে বলা হয় পৃথিবীর তৃতীয় মেরু। এশিয়ার দশটিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ নদ নদীর উৎপত্তি হয়েছে এই তিব্বত মালভূমিতে। পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় 44 শতাংশ মানুষ ব্যবহার্য পানির জন্য তিব্বতে উৎপন্ন নদ-নদী গুলির উপর নির্ভরশীল। এই নদী গুলির তীরেই গড়ে উঠেছিল অনেকগুলো প্রাচীন সভ্যতা।
.
১ . Yarlung Tsangpo , 2900 km - তিব্বতের সবচেয়ে উচ্চতম ও দীর্ঘতম নদী। পশ্চিম তিব্বতের এনসি হিমবাহতে এই নদী জন্ম নিয়েছে। তিব্বতে চারটি প্রধান শাখা সহ অসংখ্য প্রশাখা রয়েছে। ভারতে ঢোকার সময় নাম হয়েছে ব্রহ্মপুত্র , বাংলাদেশের ঢুকে যমুনা নাম নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে।
.
২ . Yellow River , 5464 km - তিব্বতীয় মালভূমির কিংঘাই প্রদেশ উৎপন্ন হয়ে চীনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে । এই নদীকে "ক্রেডল অফ চাইনিজ সিভিলাইজেশন" বলা হয়। বিশেষ ধরনের লোয়েস পলিমাটি থাকার কারণে একে হলুদ নদীও বলা হয়।
.
৩ . Lancang River , 4350 km - মেকং নদী নামেও পরিচিত। তিব্বতের কিংঘাই প্রদেশে উৎপত্তি হয়ে চীনের উনান প্রদেশ , মিয়ানমার , লাওস , থাইল্যান্ডে , কম্বোডিয়া , ভিয়েতনাম হয়ে দক্ষিণ চীন সাগরে পতিত হয়েছে। আমাজানের পরে এখানেই সবচেয়ে বেশি মৎস্য বৈচিত্র্য রয়েছে। এই অঞ্চলের মানুষের প্রোটিনের অন্যতম যোগানদার , অধিকাংশ বাণিজ্য এই নদীপথেই হয়ে থাকে।
.
৪ . Nu River 2815 km - তিব্বতের তাঙ্গুলা পর্বতের নাজকু নদী থেকে উৎপত্তি হয়েছে। সালউইন নদী নামেও পরিচিত। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আন্দামান সাগরে পতিত হয়েছে। এই নদীর অববাহিকায় রয়েছে বেশকিছু বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর বাসস্থান যেমন গোল্ডেন আই মাঙ্কি। , ছোট পান্ডা, বুনো গাধা , বুনো ষাঁড়।
.
৫ . Indus River , 3180 km - এশিয়াতে গঙ্গার পরেই সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী নদী। তিব্বতের কৈলাস পর্বতমালা ও মানস সরোবরে উৎপত্তি হয়ে ভারত ও পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আরব সাগরে শেষ হয়েছে। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো নামে দুইটি প্রাচীন সভ্যতা এই নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল। ভারত ও পাকিস্তানের এক বড় অংশের মানুষ খাদ্য ও কৃষির জন্য এই নদীর উপর নির্ভরশীল।
.
সুতরাং দেখা যাচ্ছে তিব্বতের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকলে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষ এবং তাদের খাদ্য ও বাণিজ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়া সম্ভব। জেরুজালেমের মত না হলেও তিব্বতের ধর্মীয় গুরুত্ব কম নয়। বৌদ্ধ ধর্মের মূল আধ্যাত্বিক কেন্দ্র ও তাদের ধর্মীয় গুরু দালাইলামার ধর্মীয় অফিস রয়েছে এখানে।
.
এই আলোচনা থেকে বোঝা যায় কেন মুসলিমরা এশিয়াতে রাজ্য বিস্তারের সময় তিব্বতে একটা অভিযান পরিচালনা করেছিল। বঙ্গ বিজয়ী বীর মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি নিজেও তিব্বতে অভিযান করেছিলেন। আধুনিক যুগে তিব্বতের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে চীন। কেন নিয়েছে তা এখন অত্যন্ত পরিষ্কার।
বিঃদ্রঃ চীনে রাজা শাসনের সময় থেকে তিব্বত চীনের অংশ ছিল পরবর্তীতে বৃটিশ শাসন করলে তিব্বত চীন থেকে আলাদা হয় পরবর্তীতে চীন বৃটীশ থেকে সাধীন হলে চীন তিব্বত পুনরায় দখল করে কারণ তিব্বত চীনের অংশ শুধু জিনজিয়াং মূলত তুুর্কিস্থান নামে ডাকা হত চীনের অংশ নয় সেটি জোরপূর্বক দখল করে চীনারা।
0 Comments