[১]
দিনভর কাজ কাজ করতে করতে আমার বেলা গড়ায়। সারাদিনের ক্লান্ত শ্রান্ত দেহ নিয়ে যখন একটু জায়নামাজে নিজেকে বিছাই, তখন একটু প্রশান্তি লাগে। কিন্তু আমার কি আর সেই সৌভাগ্য আছে?
সারাদিন একা একা হাড়ভাঙা খাটুনি করি। বৃদ্ধ শ্বশুড়-শাশুড়ির বিছানাপত্র, জামা-কাপড় পরিষ্কার করতে করতে মেরুদণ্ড ব্যথা হয়ে। তারপরও তাকে কিছু বলি না। নিজের বোনের মত তাকে আপ্যায়ন করি। তারপরও তার নাগাল পাই না। তাতেও কোনো কষ্ট হতো না, যদি ঠিকমত একটু নামাজ পড়তে পারতাম। আল্লাহর চব্বিশ ঘণ্টা এই বাড়িতে লাউডস্পিকার দিয়ে টিভি চলে। তিথিকে অনেক কয়েকবার বলেছি, টিভির সাউন্ড কমাতে। সাউন্ড কমানো তো দুরের কথা, আমার ডাকে একবারও সাড়া দেয়নি। আজ তিনবার ভুল হয়েছে নামাজে। এভাবে কি আর নামাজ পড়া যায়?
‘ও আল্লাহ! আমারে রক্ষা করো।’
.
.
.
আমার সংসারের যত জঞ্জালের গোড়া এই তিথি। আমার হাজবেন্ডের একমাত্র আদরের বোন। বিয়ের তিন মাস পরই শাশুড়ির সাথে ঝামেলা করে এবাড়ি এসে উঠেছে। মহারাণী তার সকালের মহামূল্যবান ঘুম ভেঙে শ্বশুর-শাশুরির জন্য কেন রুটি বানাবে? এই নিয়ে নাকি প্রচন্ড বাক বিতণ্ডা হয়। বাক বিতণ্ডার এক পর্যায়ে শাশুড়ি বলে,
-‘তোমারে আনছি বসিয়ে খাওয়ার জন্য? শ্বশুড়-শাশুরির সেবা করতে পারবানা, এটা বিয়ার আগে মনে ছিল না? যেদিন শ্বশুড়-শাশুরির সেবা করতে পারবা, সেই দিন এই বাড়িতে পা রাখবা। এখন নিজের রাস্তা মাপো।’
শাশুরির কথার ঝালে বেচারি চলে এসেছে।
সে কি আর কাজের বেটি নাকি, যে সেবা করবে? এসেছে তো এসেছে, নামার আর নাম গন্ধ নেই। নামবেই বা কেন? বাদীর মত ভাবি আছে। হাতেম তাইয়ের মত দানশীল প্রবাসী ভাই আছে। নিজে পায়ের ওপর পা তুলে খায় আর এই বাড়িতে খবরদারী ফলায়। আর কয়েক দিন পরপর তো মেরুদণ্ডহীন জামাইটা নেড়ী নাড়তে নাড়তে এবাড়ি আসে। তাহলে আর ওবাড়ি যাওয়ার দরকারটা কী? কামলা ভাবি না চাইতেও সব মুখের ওপর তুলে দেয়। এত শান্তি কি আর শ্বশুর বাড়ি হবে?
তিথি এবাড়িতে থাকে, তাতে আমার সমস্যা নেই। কিন্তু এভাবে যদি সব সময় হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকে, কারো ভালো-মন্দ হিশেব না করে, তবে ওর ভবিষ্যতের কী হবে? আজীবন কি এভাবে চলে? নিজের জীবন বলে তো কিছু আছে।
আমার হাজবেন্ডকে বলেছি। সে কোনো গুরুত্ব দেয়নি। বলেছে মানিয়ে চলতে।
আমার হাজবেন্ড আমাকে ভালোবাসে না, এটা নয়। আমি যদি তার কলিজার অর্ধেক হই, তবে বাকি অর্ধেক তার বোন। যদি বোনকে কোলে তুলে খাওয়ানো লাগে, তাতেও সে কার্পণ্য করবে না। আমাকে বলে, ‘তুমি একটু সবর করো।’
প্রথমত স্বামী বিহীন বিরহী জীবন। আবার এই ননদির অত্যাচার। জীবনটা মরুভূমি হয়ে গিয়েছে।
.
.
আমার শ্বশুড় অসুস্থ মানুষ। বিছানায় পড়া। তাই কিছু বলে না। কী বলবে? নিজের ইনকাম নেই। এই বয়সে মেয়ের যদি তালাক হয়ে যায়, তবে তো সমস্যা। তাই তিনিও মুখ বুঝে আছেন। যেমন আছে থাকুক, তালাক তো আর হয়নি।
শাশুড়ি অত্যান্ত নরম দিলের মানুষ। মেয়েকেও কিছু বলতে পারেন না, আর আমার কষ্টও দেখতে পারেন না। সব সময় আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদেন।
এই মানুষগুলো তিথির প্রতি ভালোবাসা দেখাতে যেয়ে, তার যে চরম ক্ষতি করছে, সেটা তাদের কে বোঝাবে? আমি পরের বাড়ির মেয়ে। তারিফের থেকে ভুল চোখে পড়বে বেশি। তাই কিছু বলি না। আমি পড়েছি উভয় সংকটে।
.
.
.
[২]
ছোট বেলায় বাবা-মাকে হারিয়েছি। চাচা প্রবাসী ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেন। ভেবেছিলাম, টাকার সমস্যা তবে গেল। কিন্তু এই সুখ বেশিদিন সইলো না।
প্রতিমাসে যা উনি পাঠান, তার অর্ধেক তার বোন আর বোন জামাইয়ের পেছনে খরচ হয়ে যায়। বাকি অর্ধেক দিয়ে দু’টো বৃদ্ধ মানুষের চিকিৎসা, ওষুধ, পোশাক, সাংসারিক খরচ বাদে এক টাকাও থাকে না যে, নিজের শখ আহ্লাদ পূরণ করব।
ফেস ওয়াস ক্রিমটা তিন মাস আগে শেষ হয়েছে। তারপর আর কিনতে পারিনি। লাক্স সাবান দিয়েই কাজ সারি। অথচ, ঐ নবাবজাদির চার চারটা নতুন ফেস ওয়াস। সব জিনিসে আমার এখন টান। নিজের পোশাক-আশাকও নষ্ট হয়ে গিয়েছে প্রায়। তাছাড়া উঠতে বসতে তিথি কথা শোনায়। ‘বাবার বাড়ি থেকে বিয়ের সময় এবাড়ি কোনো উপহার দিলাম না কেন? তার ভাইকে কী দিয়েছি?’ আরো অনেক কিছু।
নিজের জামাইকে বেশি কিছু বলতে পারি না। সে দুরে থাকে। কষ্ট পেয়ে কাঁদলেও শান্তনা দেয়ার মত কেউ নেই। তাই সব সয়ে নিচ্ছি। তবে ইদানিং প্রচন্ড মানসিক কষ্টে ভুগি।
.
.
.
আমার মরুময় যন্ত্রনাদায়ক জীবনের কথা সেদিন সাইমাকে বললাম। সাইমা আমার কলেজ ফ্রেন্ড। সাইমা বলল,
- ‘তুই এখন মজলুম অবস্থায় আছিস। তোর দু’আ আর আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা নেই। বেশি বেশি দু’আ কর। কবুল হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।’
ঠিকই তো। সেদিন ওর কথায় প্রচন্ড ভরসা পেয়েছি। একটা অদ্ভুৎ সহ্য ক্ষমতা আর কাজ করার স্পৃহা জন্ম নিয়েছে আমার মাঝে। নিজেকে খুব শক্তিশালী লাগছে। ভাবছি,
-‘আল্লাহ সবাইকে এমন সুযোগ দেন না। আমাকে দিয়েছেন। তাই কাজে লাগাই।’
ইদানীং আরেকটা কথা খুব মনে পড়ে। যখন কঠোরতা দিয়ে কার্যোদ্ধার করা যায় না, তখন অনিয়ত ভালোবাসা দিতে হয়। এই একটা জিনিস কেউ গ্রহন না করে পারে না।
এজন্য ননদিকে আগের থেকে আরো বেশি যত্ন-আত্মি করি। আবার তার জামাই আসবে শুনলে পোলাও-কোর্মা করি। ঘরদোর খুব পরিপাটি করি। খুব সুন্দর আপ্যায়ন করি। আবার সে যখন ফেরত যায়, তখন ননদিকে দিয়ে তাকে কিছু টাকা দিয়ে দেই। বলি,
- ‘সুমনকে দিও। বাবা-মায়ের পেছনে খরচ করতে করতে, নিজের কাছে কিছু রাখে না সম্ভবত। তোমাকে ছাড়া তো বাহিরে কোথাও ভালোমন্দ খায়ও না। আর পুরুষ মানুষের পকেট খালি থাকলে, মগজ গরম হয়ে যায়। তাই টাকাটা দিয়ে দাও।’
প্রথম প্রথম ননদি খুব অবাক হতো। তারপর থেকে খুব উৎসাহ নিয়ে টাকা নিচ্ছে।
আমার কাজ আমি করে যাব। যতদিন বেঁচে আছি, যতদিন সহ্য ক্ষমতা আছে, করে যাব।
.
.
.
[৩]
বেশ কিছুদিন যাবৎ তিথি অনেক চুপচাপ থাকছে। প্রথম প্রথম কয়েক দিন চার ওয়াক্ত নামাজও পড়েছে। কিন্তু দুই দিন হলো ফজরও পড়ে। ব্যাপারটা বেশ রহস্যজনক মনে হচ্ছে। আগে বলার পরও যে মানুষ টিভি বন্ধ করতো না, এখন সে মানুষ টিভিই দেখে না। সামান্য দেখলেও নামাজের সময় হতে না হতেই বন্ধ করে দেয়। আজ নামাজের পর দেখলাম ওর চোখ ভেজা। কী হয়েছে কে জানে? আমি আর জিজ্ঞেস করতে যাইনি। কেনই বা জিজ্ঞেস করবো? আমি কত কাঁদি। ও দেখেও না দেখার ভান করে থাকে।
নিজেকে খুব শক্ত করার চেষ্টা করছি। ভাবছি, কিছুই জিজ্ঞেস করব না। কিন্তু আমার কোমল মন সায় দিচ্ছে না। বার বার তিথির ভেজা চোখ দু’টো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। সকাল থেকে কোন কিছুতেই মন বসাতে পারিনি। যেমনই হোক, আমার ননদি। তার আর আমার স্বামীর শরীরে একই রক্ত বইছে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম তিথিকে জিজ্ঞেস করব, ‘ব্যাপার কি?’
ঘৃণার বদলে যদি ঘৃণা ছড়াই, তবে তো পৃথিবীর সকল ভালোবাসা নিঃশেষ হয়ে যাবে। তারা বরং ঘৃণা ছড়াক। আমি বরং ভালোবাসার ঢালি খুলে বসি।
.
.
.
[৪]
তিথির রুমে এসেছি। রুমের বাতি, জানালা, এসি, ফ্যান সব বন্ধ। ঘুটঘুটে অন্ধকারের ভেতর প্রচন্ড গরম। কে জানে এই গরমে কিভাবে ঘুমিয়ে আছে মেয়েটা?
রুমের মৃদু আলোর সবুজ বাতিটা জ্বলালাম। এসিটাও অন করে দিলাম। দেখছি মেয়েটা একরাশ চুল বালিশের ওপর বিছিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। ঘামে জামা ভিজে চপচপ করছে। এই মুহূর্তে ওকে দেখে খুব অসহায় লাগছে। মাঝে মাঝে প্রচন্ড কষ্ট পেয়ে আমিও এমন করে শুয়ে থাকি। তাই ওর কষ্ট বুঝতে বেগ পেতে হলো না। খুব মায়া হচ্ছে মেয়েটার জন্য।
আস্তে গিয়ে তিথির মাথায় হাত বেলালাম। হাত বোলানোর সাথে সাথে তিথি ধড়মড় করে উঠে বসল। চোখ দু’টো গাড় লাল বর্ণে ছেয়ে আছে। গাল দু’টো ফুলে টমেটো। দু’গালে লম্বা দু’টো দাগ। দেখেই মনে হচ্ছে কান্নার পানি শুকিয়ে এমন দাগ পড়েছে। নাকটা গোলাপি হয়ে আছে। ওকে এই অবস্থায় দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিথি মাথাটা নিচু করে ফেললো। আমি আস্তে ওর দাড়িতে হাত দিয়ে মাথাটা উপরের দিকে তুলে জিজ্ঞেস করলাম,
-‘কি হয়েছে? এমন বিচ্ছিরি অবস্থা কেন চেহারার?’
তিথি কথা বলছে না। গলা আটকে গিয়েছে সম্ভবত। বেশি কাঁদলে গলা এমন আটকে যায়। গলার ভেতর ব্যথা হয়। গলা শুঁকিয়ে যায়। চাইলেও কথা বের হতে চায় না। কিন্তু ওর অসহায় চোখ দু’টো দেখলেই মনে হয় রাজ্যের কথা জমা আছে ভেতরে।
তিথিকে চুপ থাকতে দেখে আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,
-‘সুমন কিছু বলেছে?’
-‘হুম।’ ও মাথা দুলিয়ে বলল।
যা ভেবেছিলাম তাই হয়েছে। ছেলেটা গত তিন সপ্তাহে একবারও এবাড়িতে পা দেয়নি। অন্য সময় হলে কমপক্ষে চারবার তো আসতই। আবার তিথিকে এই কয় সপ্তাহ ফোনে গুটুরগুটুর আলাপ করতেও দেখিনি। নিশ্চয় কোন ঝামেলা হয়েছে। তাই খাটের ওপর পা তুলে শক্ত হয়ে বসলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম,
-‘কি হয়েছে?’
-‘ও বলেছে, যদি ওদের বাড়িতে না যাই, তবে আমাকে তালাক দিবে। এভাবে নাকি আর চলে না।’
-‘তারপর?’
-‘তারপর বলছে, ও মেরুদণ্ডহীন না। রোজ রোজ আপনার আপ্যায়ন আর টাকা নিতে নাকি ওর লজ্জা করে। তাই আর এবাড়ি আসবে না। যদি কখনো আমার সাথে শ্বশুড়-শাশুড়ির সম্পর্ক ভালো হয়, তবেই এবাড়িতে আসবে।’
তিথি হাপুসনয়নে কেঁদেই যাচ্ছে। ও কখনো আমার সাথে এত ফ্রি হয়নি। ওকে এভাবে কাঁদতে দেখে নিজের ভেতরের বোনবাৎসল সত্ত্বাটা জেগে উঠল। আমারও কান্না পাচ্ছে। আগেই বলেছি, আমার কোমল মন। তাই একটুতেই কেঁদে ওঠে। তবে এই কান্নার ভেতর কিছুটা স্বস্তি আছে। কারণ, যা চেয়েছিলাম, তার থেকে বেশি পেয়ে গেছি। তিথির জামাইকে অকর্মা আর নির্লজ্জ মনে হতো। কিন্তু আমার অতিরিক্ত আপ্যায়ন আর যত্ন তাকে লজ্জায় ফেলেছে। এটা স্বস্তির ব্যাপার। কোনো এক লেখক বলেছেন, ‘সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে, বাঁকা আঙ্গুলেও ঘি ওঠে না। তাই চামচ ব্যবহার করতে হয়।’ তিথিকে সঠিকটা বোঝানোর মোক্ষম সময় এখনই। আজকালকার মেয়েরা কেন যে, শ্বশুড় বাড়ির কাজকে বোঝা হিশেবে নেয় বুঝি না। ওটা তো তারই রাজ্য। প্রথম কিছুদিন সামলাতে কষ্ট হলেও, এক পর্যায়ে ঐ রাজ্যের হর্তাকর্তা তো সে-ই হবে। যাই হোক। তিথিকে শান্তনা দেয়া উচিত।
-‘আচ্ছা তিথি তুমি কি চাও?’
-‘আমি তো সুমনকে ভালোবাসি। আমি ওকে চাই।’
-‘সুমনের বাবা-মাকে চাও না?’
তিথি খানিকটা নিশ্চুপ। কিছু বলছে না। তাই আমিই শুরু করলাম।
-‘শোনো তিথি, তুমি তোমার দায়িত্বগুলোকে কেন বোঝা ভাবছো? ওটা তোমার সংসার। তোমার রাজ্য। তোমার রাজ্য তুমি দেখভাল করবে নাতো, কে করবে বলো? এটা তো তোমার কষ্ট না, এটা তোমার দায়িত্ব। রাজ্য দেখেশুনে প্রজাদের চাহিদা পূরণ করে খুশি রাখতে পারলেই তো রাজা ঠিক থাকে। না হলে তো রাজ্যে বিদ্রোহ হয়। তখন আর রাজা টিকে থাকতে পারে না। তাহলে তুমি চিন্তা করো, তুমি নিজ রাজ্য দেখাশুনা করে রাজা হয়ে থাকবে, নাকি প্রজাদের ক্ষেপিয়ে নিজেকে সিংহাসন চূত্য করবে? এটা তোমার ব্যাপার।’
-‘আমি ফেরত যাব।’
কথাটা বলে সে অঝোর ধারায় কান্না শুরু করেছে। কোনো থামাথামি নেই। কাঁদতে কাঁদতে তার নিঃশ্বাস দ্রুত হয়ে যাচ্ছে। আমি বুঝতে পারলাম, একটা নীড় ভোলা পাখি, তার নীড়ের খোঁজ পেয়েছে। ভাবতেই নিজের চোখ দু’টো ভিজে উঠলো। তিথিকে প্রচন্ড ভালো লাগছে। ঠিক নিজের বোনের মত। তাই ওর মাথাটা নিজের কোলের ভেতর নিয়ে বললাম,
-‘এখনো কিছুই হয়নি পাগল। কোন জিনিস ভাঙার পর সেটা আর আগের মত জোড়া লাগে না। তোমার তো কিছুই ভাঙেনি। তুমি যদি এখনই তোমার জিনিসটাকে আগলে রাখো, তবে সেটা ঠিক আগের মতই সুন্দর থাকবে।’
-‘ভাবি আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আমি তোমার উপরেও অনেক জুলুম করেছি। আমাকে মাফ করে দিও।’ তিথি স্বল্পভাষী মানুষ। তবে ওর এই সামান্য কথা আমার কাছে, গোটা পৃথিবীর ন্যায় বিস্তীর্ণ মনে হলো। এই সামান্য কথা আমার হৃদয়ের খুব গোপন কোণে জমা সুক্ষ্ম অভিমান, অভিযোগ, রাগ, ঘৃণাগুলোকে মুহূর্তের মধ্যেই তরল পারদে পরিণত করে দিল। কী অদ্ভুদ ক্ষমতা এই কথাগুলোতে! এর মাঝে কোনো লজ্জা নেই, কোনো ক্লেশ নেই, নেই কোনো বাহানা। এর মাঝে আছে নিজেকে মানুষ হিশেবে গড়ার পার্যাপ্ত উপকরণ।
তিথি আমার কোলের ভেতর মাথাটা শক্ত করে রেখে আছে। আমার ডান হাতটাকে ওর বাম হাত দিয়ে চেপে ধরেছে। আমি বুঝতে পারছি, পাহাড়ি ঢলের মত ঝমঝম করে তিথির চোখ থেকে পানি ঝরছে। আমার কণ্ঠ আবারো ভারি হয়ে গিয়েছে। তবে বড়দের এভাবে কাঁদতে নেই। তাই নিজেকে সামলে, আমি ওকে ধরে উঠিয়ে বসালাম। ওর চোখ দু’টো জলে এখনো টইটুম্বুর। অনুতাপের অশ্রুগুলো বড্ড সুন্দর হয়। এগুলো রব নিয়ামাহ স্বরূপ পাঠায়। আমি আলতো করে আমার ওড়নার আঁচলটা দিয়ে ওর চোখ দু’টো মুছে দিলাম আর বললাম,
-‘তোমার সংসার তোমার রাজ্য। এটা কষ্টের নয়, বরং অহংকারের। তাই ভাঙার পূর্বেই আগলে রাখো।’
লিখাঃ সাওদা সিদ্দিকা, জাগরণ এক্সক্লুসিভ
সংগ্রহ ঃ এখানে ক্লিক করুন
0 Comments